মহাকালের ধারাবাহিকতায়, প্রতিবছরের মত আবারো ফিরে এসেছে ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যার রাত ভয়াল ২৫ মার্চ। এই কাল রাতের বীভৎসতা এতটাই নির্মম যে, হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ আর ধ্বংসযঞ্জের অতীত সব রেকর্ড ছাপিয়ে হয়ে উঠেছে বিশ্বের ভয়ালতম গণহত্যার রাত। আওয়ামী লীগ দিনটিকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করছে আর সরকার আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের জোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
৭ মার্চের ভাষণ: এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর এই উচ্চারণই পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর মনে, ভয় ধরিয়ে দেয়। শুরু হয় ষড়যন্ত্রের নেপথ্য ও প্রকাশ্য নাটক। ইয়াহিয়া খানের টালবাহানার আলোচনার আড়ালে, চলতে থাকে সামরিক প্রস্তুতি।
৭ থেকে ২৪ মার্চ নানা ঘটনা পেরিয়ে আসে,২৫ মার্চ কাল রাত। ১০টা বাজার কিছু পরেই পূর্ণ সামরিক শক্তি নিয়ে নিরস্ত্র ঘুমন্ত বাঙালির ওপর, যমদূত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানী হানাদাররা।
হামলার কৌশল হিসেবে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী প্রথমে আক্রমন চালায়,পিলখানা, রাজারবাগ পুলিশলাইন ও নীলক্ষেত এলাকায়। লক্ষ্য ছিলো নুন্যমত প্রতিরোধ গড়ে তোলার সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করা। আর এই হামলার দায়িত্ব দেয়া হয়,২২বেলুচ রেজিমেন্টকে। তাদের প্রতিরোধ করতে গিয়ে প্রাণ হারায় পুলিশের ১১শ বীরযোদ্ধা।
অন্যদিকে ১৮ নং পাঞ্জাব, ৩২ নং পাঞ্জাব ও ২২ নং বেলুচ রেজিমেন্ট, ট্যাংক ও মর্টার হামলায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। জগন্নাথ হলে ঘটে নৃশংসতম হত্যার সব থেকে বড় ঘটনাটি। হত্যাযজ্ঞ চলে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত। তৎকালীন ইকবাল হল আর রোকেয়া হলেও ঠান্ডা মাথায় হত্যাযজ্ঞ চালায় পাকিস্তানী জান্তারা। সেই রাতের প্রত্যক্ষদর্শীরা, সেই স্মৃতি মনে করলে আজো আৎতকে ওঠেন।
পরিসংখ্যান বলছে,২৫ মার্চের অপারেশন সার্চ লাইটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষক,জগন্নাথ হলের ৪৫০,ইকবাল হলের ২০০ আর রোকেয়া হলের ৩০০ শিক্ষার্থীকে ঠান্ডা মাথায় খুন করে তারা।
শুধু ছাত্র শিক্ষক আর পুলিশ নয়, সাধারণ মানুষকে হত্যার নির্মম উৎসবে মাতে পাকিস্তানী জান্তারা। রাজপথে জলপাই রঙের ট্যাংক নামে,যত্রতত্র গুলি ফোটাতে থাকে রিকেয়লেস রাইফেল। ইতিহাসের তথ্যসূত্র মতে সেই রাতে প্রায় ৫০ হাজার নিরীহ বাঙালিকে খুন করা হয়।